হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামী সংস্কৃতি ও চিন্তাচর্চা গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মাদ মালেকজাদেহ বলেন, “আরবাঈন কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি হলো ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি প্রেম, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং আত্মত্যাগের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করার শপথ। এটি একেকজন জিয়ারতকারীর জন্য প্রতিবছরের আত্মিক নবজন্ম।”
তিনি উল্লেখ করেন, এই ঐতিহাসিক পদযাত্রার সূচনা হয় কারবালার শোক ও স্মৃতিকে কেন্দ্র করে, যা ইমাম হুসাইনের (আ.) পরিবারের সদস্যরা প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাসে দেখা যায়, কারবালায় ফিরে এসে তাঁরা শহীদদের কবর জিয়ারত করেন, যা এই পদযাত্রার সূচনা চিহ্নিত করে।
আন্তর্জাতিক বার্তার বাহক
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে আরবাঈন পদযাত্রা শিয়া সম্প্রদায়ের ঐক্য, সংহতি ও রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতীক। এটি অন্যদেরকেও ইমাম হুসাইনের আদর্শ জানার প্রতি উৎসাহী করে তোলে। একইসাথে এটি ইসলামী উম্মাহর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির এক বিরল সুযোগ।”
অসংখ্য মানুষের যাত্রা, হৃদয়ের গল্প
হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মাদ হাসান নাবাভি বলেন, “এই পদযাত্রায় অংশ নেওয়া প্রতিটি ব্যক্তি নিজের জীবনের গভীর বেদনা, অনুশোচনা বা আশা নিয়ে হাঁটেন। কেউ শোক বহন করেন, কেউ খুঁজে ফেরেন শান্তি। এই যাত্রা কেবল বাহ্যিক নয়, এটি অন্তর্জগতের পথচলা।”
তিনি বলেন, “পথে পথে মানুষ নিজের সঙ্গে, অতীতের সঙ্গে এবং আল্লাহর সঙ্গে নতুন করে সংলাপ করেন। কেউ বছরজুড়ে খুঁজে পাওয়া শান্তি এখানে খুঁজে পান এক মুহূর্তেই।”
তিনি যোগ করেন, “এই যাত্রা শুরু হয় নাজাফ, বসরা এমনকি ইরান ও পাকিস্তান থেকেও। এটি শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ—বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ সমাবেশগুলোর একটি। পথে পথে জাতি, বর্ণ ও ভাষার ব্যবধান ভুলে মানুষ একত্র হন ইমাম হুসাইনের প্রেমে।”
বাস্তবতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে গল্প বলার আহ্বান
জনাব নাবাভি বলেন, “যদি এই অভিজ্ঞতাগুলোকে বাস্তবতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে তুলে ধরা যায়, তবে তা হতে পারে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী গল্পগুলোর একটি। ক্যামেরা দিয়ে কেবল পদক্ষেপ নয়, ধাক্কা খাওয়া আত্মার জেগে ওঠাকেও ধারণ করতে হবে।”
প্রত্যেক যাত্রী একেকজন বার্তাবাহক
জনাব নাবাভি আরও বলেন, “এই যাত্রায় অনেকে ফোস্কা-পড়া পা নিয়েও বলেন, ‘ইশ্! যদি আমরা হুসাইনের সঙ্গে হতে পারতাম!’ এই আবেগ, এই প্রেমই পদযাত্রার আসল শক্তি।”
তিনি বলেন, “যাঁরা অপরিচিতদের জন্য রান্না করেন, আশ্রয় দেন, সেবা করেন—এঁরাই আমাদের প্রকৃত নায়ক। আরবাঈনের পথে প্রতিটি করতালি, প্রতিটি জলবিন্দু ও প্রতিটি খাবার পরিবেশন যেন হয়ে ওঠে হুসাইনের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম।”
গাজার মজলুমদের কথা স্মরণ
ড. ফাতেমা সাইয়্যেদ মাদাল্লাল, হাওজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক বলেন, “ইরাকের জনগণের নিঃস্বার্থ সেবা ও আতিথেয়তা আরবাঈনের অন্যতম সুন্দর দিক। তবে একইসাথে এই পদযাত্রাকে ব্যবহার করতে হবে গাজার মতো নিপীড়িত জনগণের পক্ষে বার্তা পৌঁছে দিতে।”
তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে যে বিপ্লবী চেতনা রয়েছে, তা আরবাঈনের মাধ্যমে জেগে উঠতে পারে। তারা যখন বুঝবে যে, প্রতিরোধ ও ন্যায়ের বার্তাই হুসাইনের মূল বার্তা—তখনই এটি হবে গাজার জন্য এক কার্যকর সমর্থন।”
মিডিয়ার ভূমিকাই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি
প্রতিবেদনে বারবার উঠে এসেছে—মিডিয়ার মাধ্যমে আরবাঈনের বার্তাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার অপরিহার্যতা। এই পদযাত্রা যেন হয়ে ওঠে সত্য, আত্মত্যাগ ও মানবতার এক বিশাল বিজ্ঞাপন, যা সমস্ত বিভাজনের বিরুদ্ধে এক ঐক্যের ডাক। "আমরা সত্যের পক্ষে, আমরা নিপীড়িতের পাশে"—এই হোক আরবাঈনের চূড়ান্ত বার্তা।
আপনার কমেন্ট